।। প্রাণায়াম ।।
যোগ প্রক্রিয়ার অন্তর্গত প্রাণায়ামের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ঋষি পতঞ্জলি মানুষের কল্যাণের জন্য অষ্টাঙ্গ যোগের সৃষ্টি করেছিলেন।
প্রাণায়াম অন্তরঙ্গ ও বহিরাঙ্গ যোগের মধ্যে সংযোগ বা যোগসূত্রের কাজ করে। শরীরকে সুস্থ এবং নীরোগ রাখতে এবং মনকে পবিত্র ও আত্মাকে শুদ্ধ করতে প্রাণায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রাণায়ামের সাহায্যে কামনা-বাসনা মুক্ত হয়ে মনকে সমাধিস্থ করেই সাধক জীবনে মোক্ষলাভ করতে সক্ষম।
প্রাণায়ামের ধরণসমূহ:
-
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম
যে কোন আসনে বসে দুই নাসিকার ছিদ্র দ্বারা শ্বাসকে সম্পূর্ণ ভেতরের ডায়াফ্রাম পর্যন্ত ভরে এবং পরে বাইরে সহজভাবে ছাড়াকে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম বলা হয়।
লাভ: সর্দি-কাশি, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, এজমা, পুরানো কাশি, সাইনাস ইত্যাদি রোগ দূর হয়। ফুসফুস শক্তিশালী হয়, হৃদয় ও মস্তিষ্কের শুদ্ধ প্রাণবায়ু পাওয়া যায়। -
কপালভাতি প্রাণায়াম
কপালভাতি একটি শক্তিশালী শ্বাসনালী দিয়ে শ্বাস ছাড়ার প্রক্রিয়া, যা মস্তিষ্কে সতেজতা ও তেজ বৃদ্ধি করে।
লাভ: হৃদয়, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কের রোগ দূর হয়। পেটের সমস্যা, সুগার, গ্যাস, কিডনি, প্রস্টেট সমস্যাও কমে। -
অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম
এই প্রাণায়ামে বাম নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে ডান নাক দিয়ে ছাড়তে হয় এবং এই প্রক্রিয়া উল্টোভাবে চলতে থাকে।
লাভ: বাত, স্নায়ু দুর্বলতা, মুত্র রোগ, ধাতু রোগ, সর্দি, কাশি, সাইনাসের সমস্যা দূর হয়। ত্রিদোষের প্রশমন ঘটে। -
ভ্রামরী প্রাণায়াম
মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা নাকের মূলে চাপ দিয়ে মনকে কেন্দ্রিত করে ওম্ উচ্চারণ করতে করতে শ্বাস ছাড়তে হয়।
লাভ: মনের চঞ্চলতা দূর হয়, উত্তেজনা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদয় রোগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে উপকারী। -
ব্রাহ্ম প্রাণায়াম
এই প্রাণায়ামে "ওঁ" ধ্বনি উচ্চারণের মাধ্যমে মনকে একাগ্র করা হয় এবং শ্বাস প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
লাভ: মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি, মনের শান্তি, মানসিক চাপ কমানো এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি। -
উজ্জায়ী প্রাণায়াম
এটি একটি বিশেষ শ্বাসনালী প্রক্রিয়া, যেখানে শ্বাসের সময় কণ্ঠস্বর একটু বাড়ানো হয়, যা গলার মধ্যে আওয়াজ তৈরি করে।
লাভ: দেহে শক্তি বৃদ্ধি, মনোযোগ বাড়ানো, শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান। -
উদগীত প্রাণায়াম
শ্বাসের সাথে "উদগীত" ধ্বনি উচ্চারণ করা হয়, যা শরীরের শক্তি ও শক্তিমত্তা বাড়াতে সহায়ক।
লাভ: মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, মনোযোগ এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল রাখা। -
প্রণব প্রাণায়াম
এটি শ্বাসের সাথে "প্রণব" ধ্বনি উচ্চারণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করা হয়।
লাভ: আধ্যাত্মিক উন্নতি, মনের শান্তি এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করা। -
শীতলী প্রাণায়াম
এই প্রাণায়ামে ঠাণ্ডা শ্বাসের মাধ্যমে শরীরের উত্তাপ কমানো হয় এবং এটি শীতলতা প্রদান করে।
লাভ: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উত্তেজনা কমানো এবং শান্তি বৃদ্ধি। -
বাহ্য প্রাণায়াম
এই প্রাণায়ামে বাহ্যিক শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি হয়।
লাভ: শারীরিক শক্তি বাড়ানো, স্নায়ু শক্তিশালী করা, এবং শক্তি পুনঃসঞ্চয়।
উৎসাহী ব্যক্তিগণ এই প্রাণায়ামগুলি শেখার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিন।